বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় অকসিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না। সিলিন্ডার দিয়েই রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ওভাবে অকসিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ শ্বাসকষ্টে ভোগে। সেজন্য কৃত্রিমভাবে অকসিজেন দিতে হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরল অকসিজেন ট্যাঙ্ক না থাকায় ওসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের অকসিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ৮৩টি হাসপাতালে তরল অকসিজেন ট্যাঙ্ক বসানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিমধ্যে ২৩টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন এবং লিকুইড অকসিজেন ট্যাংক স্থাপনে সরাসরি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর ৩৯টি সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অকসিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবশিষ্ট ২১টিরও প্রক্রিয়া চলছে। গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক স্মারকে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী ব্যবস্থাপনার ২৩টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন এবং লিকুইড অকসিজেন ট্যাংক স্থাপনে সরাসরি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হলো। তার আগে গত ২ জুন অপর এক স্মারকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গণপূর্ত বিভাগকে ৩৯টি সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অকসিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এভাবে দুটি স্মারকে অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য মোট ৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ২৫টি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ৫টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১২টি ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। তাছাড়া ২১টি হাসপাতালে অকসিজেন ট্যাংক স্থাপনের কাজ করবে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযের দুটি স্মারকে যেসব হাসপাতালে ট্যাংক স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো হলো- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এমএজে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হলো- শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ রসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল।

সূত্র আরো জানায়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়া আড়াইশ শয্যার যেসব হাসপাতালে অকসিজেন ট্যাঙ্ক বসানো হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, মাগুরা জেলা হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, বগুড়া মোহাম্মদ আলী জেনারেল হাসপাতাল, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। তাছাড়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালগুলো হলো- রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ঝালকাঠি, ঝিনাইদহ এবং লালমনিরহাট। তাছাড়া ছাড়া ইউনিসেফের সহযোগিতায় আরো ৩০টি হাসপাতালে গ্যাস পাইপলাইন ও অকসিজেন ট্যাংক বসানো হচ্ছে। সেগুলো হলো পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নেয়াখালী, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, শরীয়তপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল। পাবনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে সারাদেশে আইসিইউ শয্যা ৩৯৪টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২২৬টিতে এবং খালি আছে ১৬৮টি। অর্থাৎ সাধারণ ও আইসিইউ মিলে রয়েছে মোট ১৫ হাজার ৩৩৯ শয্যা। তার মধ্যে ভর্তি আছে ৪ হাজার ৫৮৭ রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১০ হাজার ৭৫২টি। সব হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে মোট ১০ হাজার ২৪০টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা ৮০টি এবং অকসিজেন কনসেনট্রেটর ৫৫টি। ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি। তাতে ভর্তি আছেন ২ হাজার ১৯৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ১০৬টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১৪২টি। তাতে ভর্তি আছেন ১০৮ জন এবং খালি আছে ৩৪টি। আর চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৬৫৭টি। এই শয্যায় ভর্তি আছে ৩১৩ জন এবং খালি আছে ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯টি। তাতে ভর্তি আছেন ১৫ জন এবং ২৪টি খালি রয়েছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অকসিজেন সঙ্কট নেই। অকসিজেন প্রয়োজন হয় এমন করোনা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অকসিজেন সরবরাহের সুযোগ নেই। যেসব হাসপাতালে তরল অকসিজেন ট্যাঙ্ক এখনো স্থাপন করা হয়নি, সেসব হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে তরল অকসিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নতুন যেসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে, সেখানে শুরু থেকেই যাতে ওসব জরুরি বিষয় সংযুক্ত রাখা হয় সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।